শাস্ত্রে তিন প্রকারের জপের উল্লেখ রয়েছে।
১. মানস জপ:
মনে মনে বা নিঃশব্দে জপ।প্রাথমিক স্তরে আমরা যদি মানসে জপ করার চেষ্টা করি আমাদের। অমনোযোগী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। থাকে। কখনো কখনো শারীরিক বিপর্যস্ততার কারণে যদি মানস জপই আমাদের একমাত্র উপায় হয় তাহলে তা ঠিক আছে। ভগবদ্ভক্তির উন্নত। স্তরে একজন ঐকান্তিক ভক্তের মানসে জপ করার দৃষ্টান্ত আমরা শাস্ত্রে পাই। হরিদাস ঠাকুর যে তিন লক্ষ নাম জপ করতেন, তার মধ্যে ১ লক্ষ তিনি মানসে করতেন।
২. উপাংশু জপ:
উপাংশু মানে মৃদু স্বরে জপ। যিনি জপ করছেন তিনি যেন তা স্পষ্ট করে শুনতে পারেন। আমাদের বেশিরভাগ জপ আমরা এভাবেই করি। শ্রীল প্রভুপাদ উপাংশু জপকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন, যার মাধ্যমে আমরা কৃষ্ণের প্রতি নিবিষ্ট হতে পারি।
৩. বাচিক জপ:
বাচিক অর্থাৎ জোরে জোরে জপ করা যা অন্যরাও শ্রবণ করে। হরিদাস ঠাকুর এ সম্পর্কে বলেছেন,
শুন, বিপ্র! সকৃৎ শুনিলে কৃষ্ণনাম।
পশু, পক্ষী, কীট যায় শ্রীবৈকুণ্ঠ-ধাম।
যন্নাম গৃহন্নখিলান্ শ্রোতৃনাত্মানমেব চ।
সদ্যঃ পুনাতি কিং ভূয়ন্তস্য স্পৃষ্টঃ পদা হি তে। (ভা. ১০/৩৪/১৭)
অনুবাদ: যিনি আপনার নাম কীর্তন করেন, তিনি নিজেকে এবং সেই সঙ্গে সেই কীর্তন শ্রবণকারীকেও পবিত্র করেন। তাহলে আপনার পাদপদ্মদ্বয়ের স্পর্শ আরো কত মঙ্গলময়?
পশু-পক্ষী-কীট আদি বলিতে না পারে। শুনিলেই হরিনাম তা'রা সব তরে'। জপিলে শ্রীকৃষ্ণনাম আপনে সে তরে। উচ্চ-সঙ্কীর্ত্তনে পর উপকার করে। অতএব উচ্চ করি' কীর্ত্তন করিলে। শতগুণ ফল হয় সর্ব্বশাস্ত্রে বলে। (চৈ. ভা. আদিখণ্ড, ১৬)
জপতো হরিনামানি স্থানে শতগুণাধিকঃ।
আত্মানঞ্চ পুনাত্যুচ্চৈর্জপন্ শ্রোতৃন পুনাতি চ॥
(শ্রীনারদীয় প্রহ্লাদবাক্যম)
জপতো হরিনামানি স্থানে শতগুণাধিকঃ।
আত্মানঞ্চ পুনাত্যুচ্চৈর্জপন্ শ্রোতৃন পুনাতি চ।
(শ্রীনারদীয় প্রহ্লাদবাক্যম)
অনুবাদ: যিনি হরিনাম জপ করেন, তা হতে উচ্চঃস্বরে কীর্তনকারী ব্যক্তি শতগুণে শ্রেষ্ঠ, ইহা যুক্তিপূর্ণ। যেহেতু জপকর্তা কেবল নিজেকে পবিত্র করেন, কিন্তু উচ্চঃস্বরে হরিনাম কীর্তনকারী ব্যক্তি নিজেকে এবং শ্রবণকারীকে পবিত্র করেন।