শ্রীমতি চিত্রা সখী(অষ্টসখীর চতুর্থ সখী)
চিত্রা দেবী শ্রীরাধা অপেক্ষা ছাব্বিশ দিনের কনিষ্ঠা। তিনি সর্বদা শ্রীকৃষ্ণের আনন্দে আনন্দিত থাকেন। বৃষভানুরাজের পিতৃব্য-পুত্র চতুর হচ্ছেন চিত্রার পিতা, মায়ের নাম চর্চিকা। পতির নাম পীঠর। আশ্বিন মাসের শুক্লা পঞ্চমীতে শনিবারে চিত্রাদেবীর জন্ম বর্ষানার দক্ষিন-পশ্চিম দিকে চিকশৌলী নামে গ্রামে।
চিত্রার অঙ্গকান্তি কেশর বা কুমকুমের মতো গৌরবর্ণ। বসন কাচপ্রভার মতো। চিত্রাদেবীর বয়স ১৪ বৎসর আড়াই মাস।
চিত্রাদেবী চিত্র অংকনে দক্ষা। বিচিত্র চতুরতায় পারদর্শী। পক্ষ-বিপক্ষ সব দলেই প্রবেশ করতে পটু। কখন কিভাবে কার সঙ্গে যুদ্ধ তর্ক করতে যেতে হবে তা তিনি জানেন। কোন কিছু লেখার ব্যাপারে পটু। সকল দেশের বিচিত্র ভাষা এবং ভাবভঙ্গিতে তিনি অভিজ্ঞ। পশুপাখীদেরও ভাব ও ভাষা বুঝতে তিনি সমর্থা। গাছপালা রোপণ ও পালনকার্যে তিনি দক্ষা।
জ্যোতিষশাস্ত্রের কার্যেও অভিজ্ঞা। গ্রহ-নক্ষত্রাদির অবস্থান নির্ণয় করে তিনি কারও ভবিষ্যৎ শুভ-অশুভ চিন্তা করতে পারেন। তিনি সর্পমন্ত্রজ্ঞা।
সরবৎ কিংবা সুস্বাদু পানীয় প্রস্তুত কার্যে তিনি দক্ষা। না আস্বাদন করে কেবলমাত্র দেখেই তিনি বলতে পারেন মধু কিংবা দুধ কি দিয়ে কি রান্না হয়েছে। কাচের পাত্র বানাতে পারেন। কাচের পাত্রে জলতরঙ্গ বা ঢেউ খেলানো ভাব প্রকাশ করতে পারেন।
সেতার (তিন তার যুক্ত বীণার মতো যন্ত্র) হচ্ছে তাঁর প্রিয় বাদ্য। সমস্ত সখী এবং দাসী যাঁরা পানীয় সেবায় নিযুক্তা, যাঁরা দিব্য ঔষধী, বনস্থলী, লতাদি সেবায় নিযুক্তা, তাঁদের সকলের অধ্যক্ষা হলেন চিত্রাদেবী।
চিত্রাদেবীর কুঞ্জ কিঞ্জল্ক বা ফুলের পরাগবর্ণের। বসন ও অলংকার দানই তাঁর নিত্য সেবা।
শ্রীরাধারাণী শ্রীকৃষ্ণের স্বভাব-সৌন্দর্য ও মাধুর্য স্মরণ করে শ্রীকৃষ্ণকে কাছে নিয়ে আসার জন্য চিত্রাসখীকে বলতেন, 'শীঘ্রই যাও। আমি যে তাঁর কথা চিন্তা করছি, সেটি বলো না। এমন ভাবে স্নেহ ও চাতুরী দিয়ে কথা বলো যাতে কৃষ্ণ এখানে আসার জন্য তোমার কাছে প্রার্থনা করেন।'
চিত্রাসখীর যুথে অবস্থিত অষ্টসখী হলেন-রসালিকা, তিলকিনী, শৌরসেনী, সুগন্ধিকা, রামিলা, কামনগরী, নাগরী ও নাগবেশিকা।
চিত্রাদেবী গৌরলীলায় শ্রীল বলমালী কবিরাজ।